নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালের বাবুগঞ্জে সুগন্ধা নদীর আকস্মিক ভাঙনে ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের ব্লক ও বেড়িবাঁধের প্রায় ১ হাজার ফুট অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। একইসঙ্গে দেবে গেছে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ক্ষুদ্রকাঠি-দোয়ারিকা গ্রামের সংযোগ সড়কের প্রায় ৪০০ ফুটের বেশি অংশ। ব্লকবাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় বরিশাল বিমানবন্দরের উত্তর প্রান্তে রানওয়ের বর্ধিতাংশের জমি তীব্র ভাঙন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। বর্তমানে নদী থেকে এ জমির দূরত্ব ৩০০ ফুটেরও কম। অথচ চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেও ওই দূরত্ব ছিল প্রায় ১ হাজার ফুটের বেশি। এছাড়াও বাবুগঞ্জ উপজেলার প্রধান রাস্তা বরিশাল-বাবুগঞ্জ-মুলাদী সড়কের হাওলাদার ইটভাটা পয়েন্ট থেকে নদীর দূরত্ব ১০০ ফুটেরও কম। খবর পেয়ে মঙ্গলবার ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল, ভাইস চেয়ারম্যান ফারজানা বিনতে ওহাব এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আমীনুল ইসলাম। অনুসন্ধানে জানা যায়, বন্যার পানি নামতে শুরু করলে সুগন্ধা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের ২৩টি পরিবার। এরমধ্যে সোমবার রাতে গৃহহীন হয়েছেন ওই গ্রামের বাসিন্দা রাশেদ খান মেনন মডেল উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হাজী আলতাফ হোসেন আকন। তার বসতবাড়ির ৩২ শতাংশ জমি রাতারাতি নদীতে ভেঙে পড়ায় তিনি পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে প্রায় ২৭০ একর জমির ফসল। আকস্মিক ভাঙনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লকবাঁধ ভেঙে ক্ষুদ্রকাঠি-দোয়ারিকা সড়কের ৪০০ ফুটের বেশি অংশ নদীবক্ষে হারিয়ে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দুই গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে প্রতিদিন সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দুই গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। মঙ্গলবার সরজমিনে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্দশার এমন করুণ চিত্র দেখা গেছে। বর্তমানে ভাঙনের মুখে রয়েছে ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের আরও প্রায় শতাধিক পরিবারসহ উত্তর ক্ষুদ্রকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আল-কারিম কেরাতুল কোরআন মাদ্রাসা, রাশেদ খান মেনন পাঠাগার, বকুলতলা বাজার, বকুলতলা ময়দান জামে মসজিদ, বেপারী বাড়ি জামে মসজিদ ও মুন্সিবাড়ি জামে মসজিদ। ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের বকুলতলা ময়দান জামে মসজিদের সম্পাদক জামাল হোসেন গাজী জানান, গত কয়েক দিনের আকস্মিক ভাঙনে সর্বশেষ হাজী আলতাফ হোসেন আকনের বসতবাড়িসহ স্থানীয় ২৩টি বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে বকুলতলা বাজার ও ময়দান জামে মসজিদসহ তীব্র ভাঙন ঝুঁকির মুখে রয়েছে সেখানের আরও ১৪টি স্থাপনা। স্থানীয় মেম্বার ও রহমতপুর ইউপির ৫নং ওয়ার্ড সদস্য সুলতান মোল্লা জানান, কয়েক বছর আগে বিমানবন্দরের জমি রক্ষায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নদীতীরে ব্লকবাঁধ নির্মাণ করা হলেও ওই বাঁধের প্রায় ৮০ শতাংশই এখন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ফলে ক্ষুদ্রকাঠি-দোয়ারিকা সড়কটিও দ্রুত ভেঙে গিয়ে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বর্তমানে নদীর ভাঙন পয়েন্ট থেকে বিমানবন্দরের দূরত্ব ৩০০ ফুটেরও কম। তাই ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করা না হলে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে হাজার কোটি টাকার বরিশাল বিমানবন্দর ও প্রস্তাবিত নতুন বিমানঘাঁটি।
এমন আশঙ্কার সত্যতা স্বীকার করে বরিশাল বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক রথীন্দ্রনাথ চৌধুরী বলেন, ‘বিমানবন্দর রানওয়ের উত্তর প্রান্তের বর্ধিতাংশের সন্নিকটে সুগন্ধা নদীর অবস্থান। ভাঙন আগ্রাসী রূপ ধারন করলে বরিশাল বিমানবন্দরের জন্য সেটা অবশ্যই বিপদের কারণ হবে। তাছাড়া সম্প্রতি বরিশাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ এবং প্রস্তাবিত নতুন বিমানঘাঁটির জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। তাই নদী ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত সেখানে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা জরুরি।’ বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আমীনুল ইসলাম ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের নদী ভাঙনে বিলীন হওয়া বসতবাড়ি এবং ভূমির তথ্যসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে ইউনিয়ন পরিষদ ও ভূমি অফিসকে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে এখনই জরুরি খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছি আমরা। পাশাপাশি স্থায়ী পুনর্বাসনের লক্ষ্যে যারা সম্পূর্ণ ভূমিহীন তাদের জন্য খাস জমি বরাদ্দ এবং যাদের কমপক্ষে আড়াই শতাংশ জমি আছে তাদের নতুন বসতঘর প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমান সরকারের আমলে কেউ গৃহহীন থাকবে না।’
বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলাল বলেন, ‘নদী যে গতিতে ভাঙছে তাতে বিমানবন্দরের রানওয়ে পর্যন্ত যেতে বেশি সময় লাগবে না। তাই ভাঙন রোধে এখনই স্থায়ী সমাধান করা দরকার। আপাতত ভাঙন পয়েন্টে জিও ব্যাগ এবং ব্লক ফেলে আপদকালীন প্রতিরোধের পাশাপাশি চর কেটে পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে স্থায়ী নদী শাসন করতে হবে। এ ব্যাপারে আমি নিজেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী এবং মাননীয় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবো।’ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) মহাপরিচালক মো. দেলওয়ার হোসেন মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘কিছুদিন আগে বরিশাল সফরে গিয়ে আমি নিজেও বাবুগঞ্জের ছোট মীরগঞ্জ এলাকার নদী ভাঙন পরিদর্শন করেছি। আসলে জিও ব্যাগ কিংবা ব্লক দিয়ে নদী ভাঙন রোধের সাময়িক চেষ্টা করা হয়। তবে স্থায়ী প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে নদী শাসন ও গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করা। এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী এবং নির্বাহী প্রকৌশলীকে সরজমিন পরিদর্শন করে সমন্বিত একটি রিপোর্ট দিতে বলেছি। ওই রিপোর্ট পেলে মাননীয় পানিসম্পদ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’
Great item! Thanks